দেশে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত ৪ শিশু

Site Favicon প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৫৬

হেলথবার্তা২৪.কম ডেস্ক নিউজ: ২০২৫ সালে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে মানবদেহে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আটটি দেশে মোট ৩০টি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি কম্বোডিয়ায় এবং চারটি বাংলাদেশে।

২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশে চার শিশুর শরীরে বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা) শনাক্ত হয়েছে। এক থেকে আট বছর বয়সী এসব শিশু চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের সংক্রমণ হার উদ্বেগজনক। সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে তথ্য বিনিময় এবং সমন্বয় জোরদার করা জরুরি।’

গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত ‘২০২৫ সালে বার্ড ফ্লু: বাংলাদেশের প্রস্তুতি জোরদারে আইসিডিডিআর’বির গবেষণা কৌশল হালনাগাদ’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোচনায় জানানো হয়, ২০২৫ সালে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে মানবদেহে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আটটি দেশে মোট ৩০টি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি কম্বোডিয়ায় এবং চারটি বাংলাদেশে।

২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত মোট ১২ জনের মধ্যে সাতজনই পাঁচ বছরের নিচের শিশু। চলতি বছরের চারজন রোগীই এক থেকে আট বছর বয়সী শিশু, যা শিশুদের ঝুঁকির মাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ, প্রাণী-মানব সংযোগ, টিকার কার্যকারিতা, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও মহামারি প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে দেশে বার্ড ফ্লুর নজরদারি ও গবেষণা জোরদার করা দরকার।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর’বির বিজ্ঞানী ডা. সুকান্ত চৌধুরী ‘ওয়ান হেলথ রিসার্চ ইউনিট’-এর ২০২৪–২০২৫ সালের একটি গবেষণা উপস্থাপন করেন।

মার্কিন সিডিসির সহায়তায় পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ও গাজীপুরের জীবিত পাখির বাজারের ৯৫% বাতাসের নমুনায় বার্ড ফ্লু ভাইরাস (এআইভি) শনাক্ত হয়েছে। এসব বাজারকে মানব সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাজারগুলোতে মৃত মুরগির প্রায় অর্ধেকেই এইচ৫ উপধরনের এআইভি পাওয়া গেছে।

গবেষণায় পোলট্রি খাতে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন: অসুস্থ পাখিকে আলাদা না রাখা, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব ও খাঁচাগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

আইসিডিডিআর’বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান জানান, বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠা ভাইরাস ক্লেড ২.৩.৪.৪বি বাংলাদেশে তেমনভাবে ছড়ায়নি। এর কারণগুলো নিয়েও গবেষণা চলছে।

অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, বন বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ, আইইউসিএন, ডব্লিউএইচও, এফএও, মার্কিন সিডিসি এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা নজরদারি, হস্তক্ষেপ, টিকা, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, ওয়ান হেলথ পদ্ধতি এবং নীতিগত দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন বিভাগের উপপ্রধান সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির; ওয়ান হেলথ বাংলাদেশের অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ; অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান এবং মার্কিন সিডিসির প্রতিনিধি ডা. বিল ডেভিস। ডা. ডেভিস বলেন, ‘এই আলোচনার ফলাফল শুধু মার্কিন সিডিসির জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।’ সংবাদটির তথ্য দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদ মাধ্যম থেকে নেয়া হয়েছে।

আপনার পছন্দ হতে পারে