হেলথবার্তা২৪.কম: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
১. ভর্তির যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ হতে হবে। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে ভালো নম্বর থাকা আবশ্যক। সাধারণত, এসএসসি ও এইচএসসি মিলে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট থাকতে হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হতে পারে। কিছু মেডিকেল কলেজের জন্য ন্যূনতম ৬০% নম্বর পেতে হতে পারে।
ভর্তি পরীক্ষা: বিদেশে পড়ার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশের কেন্দ্রীয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে বিদেশে পড়ার জন্য একটি বৈধ সনদ বা “এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট” নিতে হয়, যা এই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর নির্ভরশীল।
ভাষাগত দক্ষতা: যে দেশে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, সেই দেশের ভাষা অথবা ইংরেজিতে দক্ষতা প্রমাণ করতে হতে পারে। এর জন্য IELTS বা TOEFL-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকা প্রয়োজন।
অন্যান্য কাগজপত্র: একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্ট, সুপারিশপত্র (Letters of Recommendation), ব্যক্তিগত বিবরণী (Personal Statement) বা মোটিভেশনাল লেটার, এবং ক্ষেত্রবিশেষে নির্দিষ্ট কোনো প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোর (যেমন: MCAT, BMAT) প্রয়োজন হতে পারে।
২. কলেজ ও দেশ নির্বাচন:
বিএমডিসি-র অনুমোদন: যে দেশে এবং যে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার কথা ভাবছেন, সেই কলেজটি বিএমডিসি দ্বারা অনুমোদিত কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিন। বিএমডিসি-র ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেশে ফিরে ডাক্তার হিসেবে প্র্যাকটিস করার জন্য বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন নিতে হয়।
কম খরচে পড়ার সুযোগ: চীন, রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে তুলনামূলকভাবে কম খরচে ডাক্তারি পড়াশোনার সুযোগ আছে। তবে খরচ নির্ভর করে দেশের জীবনযাত্রার মান এবং কলেজের ধরনের উপর।
উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ: ক্লিনিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে বিদেশে বিশেষত সুইডেন, জার্মানি, নরওয়ে ও জাপানের মতো দেশে ভালো সুযোগ আছে।
৩. আর্থিক দিক বিবেচনা:
পড়াশোনার খরচ: বিদেশে ডাক্তারি পড়া ব্যয়বহুল হতে পারে। টিউশন ফি ছাড়াও আবাসন, জীবনযাত্রার ব্যয়, যাতায়াত ইত্যাদি খরচ বিবেচনায় রাখতে হবে।
বৃত্তি (Scholarship): কিছু দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে। যেমন: জাপানে “মনবুকাগাকুশো” বা মেক্সট বৃত্তি একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম, যা টিউশন ফি, আবাসন ও অন্যান্য খরচ বহন করে।
বৈদেশিক মুদ্রা: নবাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বছরে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য ভ্রমণ সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করার সুযোগ দিয়েছে। বিদেশে পড়াশোনার খরচ ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে পরিশোধ করা যেতে পারে।
৪. আবেদন প্রক্রিয়া ও অন্যান্য পরামর্শ:
সঠিক তথ্য সংগ্রহ: কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করার আগে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন। সবচেয়ে ভালো হয় সরাসরি কলেজের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।
প্রস্তুতি: ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশোনায় মনোযোগ দিন। ইংরেজির পাশাপাশি যদি ভিন্ন কোনো দেশের ভাষা হয়, তবে সেই ভাষা শেখার চেষ্টা করুন।
সময় ব্যবস্থাপনা: ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। কারণ, বিভিন্ন দেশে আবেদনের সময়সীমা ভিন্ন হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে সময় লাগে। বিদেশে ডাক্তারি পড়াশোনা একটি দারুণ সুযোগ, তবে এটি অত্যন্ত পরিশ্রম ও খরচের ব্যাপার। তাই সবদিক ভালোভাবে বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।