হেলথবার্তা২৪.কম ডেস্ক: হাঁটুর ব্যথার সঠিক চিকিৎসা জেনে নিন শিরোনামে লিখেছেন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন। লেখাটি প্রথম আলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
মানবদেহে ওজন বহনকারী যে কটি অস্থিসন্ধি রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাঁটু। হাঁটুর ব্যথা প্রধানত বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি হয়ে থাকে। তবে এটি এমন এক সমস্যা, যেটা যে কারও যেকোনো সময় হতে পারে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা হাঁটুর ব্যথায় বেশি ভোগেন। তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে হাঁটুব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
হাঁটুব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বয়সজনিত অস্থিসন্ধির ক্ষয় বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস। এ ছাড়া হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া বা আঘাত পেলে হাঁটুব্যথা হয়। খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার সময় এটা বেশি হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামের একধরনের অটোইমিউন রোগ হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও হাঁটুর পারিপার্শ্বিক মাংসপেশির দুর্বলতা হলেও হাঁটুতে ব্যথা হয়।
চিকিৎসা ও করণীয়
হাঁটুব্যথা হঠাৎ শুরু হলে বিশ্রাম নিন। এতে হাঁটুর ওপর চাপ কমবে।
দিনে তিন–চারবার হাঁটুতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বরফের প্যাক ব্যবহার করুন।
হাঁটুর সাপোর্ট ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন।
হাঁটু উঁচু করে রাখতে হবে। রাতে হাঁটুর নিচে একটা পাতলা বালিশ রাখতে পারেন। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে।
হাঁটুব্যথার কারণ শনাক্ত করে এর চিকিৎসা নিতে হবে।
হাঁটুব্যথা উপশমের জন্য বিশেষ ব্যায়াম ও কিছু থেরাপি কার্যকর। এ জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। চর্বি ও চিনিজাতীয় খাবার কম খান।
বিশেষ ধরনের জুতা ও হাঁটুর জন্য সহায়ক ব্রেস ব্যবহার করুন। নরম ও আরামদায়ক জুতা পরিধান করুন।
পেশির শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং গুরুত্বপূর্ণ। সাঁতার, সাইকেল চালানো বামৃদু স্ট্রেচিং ব্যায়াম ও হাঁটুর হালকা ব্যায়ামগুলো করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন।
হাঁটুর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ব্যথানাশক সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া কার্টিলেজ রক্ষাকারী ওষুধ যেমন গ্লুকোসামিন খাওয়া যেতে পারে।
গুরুতর ক্ষেত্রে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট বা লিগামেন্ট রিপেয়ার সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
হাঁটুর জয়েন্টগুলোতে চাপ কমাতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার (ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি) খেতে হবে।
পান করুন পর্যাপ্ত পানি।
লেখক: অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক সার্জারি, ল্যাবএইড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা