হেলথডেস্ক২৪.কম: শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। কোনো কাজ শিশু কতটা মনোযোগ দিয়ে করতে পারবে, নির্ভর করবে শিশুর ঘুমের ওপর। সুস্থ থাকতে শিশুকে যেমন ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা শেখানো হয়, তেমনি তাদের নিদ্রা স্বাস্থ্যবিধিও অভ্যাস করানো উচিত। একেই বলে স্লিপ হাইজিন। এই নিদ্রা স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে শিশুরাও আজকাল ঘুমের সমস্যায় ভুগছে। শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই চলুন। লিখেছেন রাফিয়া আলম। লেখাটি প্রথম আলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
সময় হোক নির্দিষ্ট: রোজ একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। তবে বিষয়টা যেন এমন না হয় যে শিশুকে জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে অভিভাবক রাত জেগে মুঠোফোন স্ক্রল করছেন। ছুটির দিনে দেরি করে ওঠার অভ্যাসটিও শিশুর জন্য ভালো নয়। তাতে বায়োলজিক্যাল ক্লক বা দেহঘড়ির সময় এলোমেলো হয়ে যায়। তাই ছুটির আগের দিনও রাত করে বাইরে ঘোরাঘুরি কিংবা রাত জেগে সিনেমা দেখা বা গল্প করা ভালো চর্চা নয়। তাতে সেদিন ঘুমাতে দেরি হবে, পরদিন ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হবে। এলোমেলো হবে দেহঘড়ির সময়।
ঘুমের আয়োজন: বিছানায় পড়ালেখা, গেম খেলা, খাওয়া দাওয়া বা অন্য কোনো কাজ করা যাবে না। বিছানা কেবল ঘুমেরই জন্য ব্যবহার করতে হবে। তাহলে বিছানায় গেলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারবে, এখন ঘুমের সময়।ঘুমের আগে ছোট শিশুকে গল্প বা ছড়া বলা যেতে পারে। একটু বড় হলে ঘুমের আগে নিজেও বই পড়তে পারে শিশু। তবে উত্তেজনাপূর্ণ কোনো কিছুই ঘুমের আগে ভালো নয়। হোক তা গল্প, হোক তা বই। ঘুমের আগের সময়ে এমন বই বেছে নেওয়া উচিত নয়, যা গভীর চিন্তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। অন্ধকার ঘরে শিশু ভয় পেতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে ঘুমের সময় ঘরে মৃদু আলোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ঘুমের আগে শিশুকে উষ্ণ পানিতে গোসল করানো যেতে পারে। তাঁকে প্রার্থনা করতে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। যোগব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম, শিথিলায়নের অভ্যাস করা যেতে পারে। শোনানো যেতে পারে আয়েশি কোনো অডিও।
ঘুমের আগমুহূর্তে যা করতে নেই: ঘুমের অন্তত এক-দুই ঘণ্টা আগেই পড়ালেখা শেষ করে ফেলতে হবে। রাতে পড়া শেষ না হলে ভোরে উঠে পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিক বা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের পাট চুকিয়ে ফেলতে হবে। খেলাধুলা বা শারীরিক শ্রম হয়, এমন কাজ ঘুমের অন্তত চার ঘণ্টা আগেই সেরে নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ: ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দু-তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। রাতের খাবারটা হতে হবে হালকা, সহজপাচ্য। রাতে ভারী খাবার, মসলাদার খাবার, মিষ্টি খাবার, চিপস প্রভৃতি খাওয়া উচিত নয়। ঘুমের এক ঘণ্টা আগে দুধ, খেজুর বা কলা খাওয়া যেতে পারে। তাহলে রাতে হঠাৎ খিদে পাবে না। তবে এ সময় বাড়তি কোনো স্বাদ বা ঘ্রাণের দুধ (ফ্লেভারড মিল্ক) না খাওয়াই ভালো। বেলা দুইটার পর চকোলেট বা চকোলেট মেশানো খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ, চকোলেটে ক্যাফেইন থাকে, যা ঘুমের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটু বড় হওয়ার পর চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস হলে তখনো খেয়াল রাখতে হবে, বেলা দুইটার পর যেন এসব পানীয় খাওয়া না হয়। লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে।